সরকারি চাকরি প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের উপর বিশ্বাস রাখা। মনে প্রানে বিশ্বাস করবেন যে আপনি অবশ্যই সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য, ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই চাকরি পাবেন।

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব

সরকারি চাকরির বেতন বেসরকারি চাকরির চেয়ে তুলনায় কম হলেও চাকরির নিশ্চয়তা বা জব সিকিউরিটি, সামাজিক স্বীকৃতি, শেষ বয়সে পেনশনের সুবিধা মূলত সবাইকে আকৃষ্ট করে। আবার বেশ কিছু চাকরিতে ক্ষমতার চর্চাও করা যায়। 

চলুন এবার জেনে নেই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন। একেক জনের লেখাপড়ার স্টাইল একেক রকম। আমরা একটা জেনারেল গাইড লাইন দেখব। আপনারা নিজের মত করে প্রস্তুতি শুরু করবেন। 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব
Image by kp yamu Jayanath from Pixabay

পড়ালেখার পরিবেশ কেমন হবে

আমাদের চারপাশে বেশিরভাগ মানুষ নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করে। যেমন, ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি হয় না। পড়াশোনা করে লাভ নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার ববন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা এই টাইপের লোক আছে তাদের এড়িয়ে চলুন। আপনার বন্ধুদের মধ্যে কিছু বন্ধু আছে যারা আপনাকে আড্ডা দিতে, ঘুরাঘুরি করতে উৎসাহ দিবে। এদের এড়িয়ে যান। আড্ডা ঘুরাঘুরি অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু বেশি কখনো ভালো না। 

আপনার পড়ার টেবিল, যদি সম্ভব হয় নিরিবিলি রুমে নিন। যেখানে অনাঙ্ক্ষিত কোন ঝামেলা নাই। এমন রুম নিন যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে। 

সরকারি চাকরি প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 

সরকারি চাকরি প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের উপর বিশ্বাস রাখা। মনে প্রানে বিশ্বাস করবেন যে আপনি অবশ্যই সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য, ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই চাকরি পাবেন। সব সময় ফোকাসড থাকবেন। মনোযোগ কোনভাবেই অন্যদিকে ডাইভার্ট হতে দেবেন না। আপনি যদি ধরে নেন যে আপনার দ্বারা সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব না তাহলে কোন দিনই চাকরি আপনি পাবেন না। 

ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কমিয়ে দিন। টিভি দেখা কমিয়ে দিন। আলস্য কমিয়ে দিন। জীবনটা একটা ছকের মধ্যে নিয়ে আসুন। সময়মত খাবার খাবেন, পড়বেন, নামাজ পড়বেন, খেলবেন, আড্ডা দিবেন, পরিবারের সাথে সময় কাটাবেন। 

সরকারি চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি 

আপনি আগে ঠিক করে নিন কোন ধরনের চাকরির প্রস্তুতি নিতে চান। বিসিএস/নন-ক্যাডারের প্রস্তুতি এক ধরনের আবার ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতি অন্য ধরনের। চাইলে দুইটার জন্যই প্রস্তুতি নিতে পারেন। লক্ষ্য ঠিক হয়ে গেলে একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে বিগত দশটি পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করুন। প্রশ্নে যেন উত্তর দেয়া না থাকে। 

এক ঘন্টা সময় নিয়ে যেকোনো একটি পরীক্ষা দিতে বসে যাবেন। ইন্টারনেটে এমসিকিউ উত্তরপত্র পাওয়া যায়। এক কপি প্রিন্ট করে ফটোকপি করে নিন। মোবাইল ফোন বন্ধ করে বা এয়ারপ্লেন মোডে দিয়ে পরীক্ষা শুরু করবেন। কড়াকড়িভাবে সময় মেনে চলবেন। পরীক্ষা শেষ করে উত্তর মিলিয়ে দেখুন কত গুলো ঠিক হয়েছে। 

১০০টি প্রশ্নের মধ্যে যদি ২০-৩০টা প্রশ্নের উত্তর ঠিক দিতে পারেন তাহলে ধরে নিন আপনার বেসিক ঠিক আছে।

সরকারি চাকরিতে কি ধরনের প্রশ্ন আসে

এবার চলুন দেখি কি ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে৷ সরকারি চাকরি পরীক্ষায় সাতটি বিষয়ের উপর প্রশ্ন হয়-

১. বাংলা 

২. ইংরেজি 

৩. গনিত

৪. সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) 

৫. বিজ্ঞান 

৬. প্রযুক্তি/আইটি

৭. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ 

সব বিষয়ে সমান নম্বর অবশ্য নেই। তবে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানে সব সময় বেশি প্রশ্ন করা হয়। 

কি কি বই কিনবেন

প্রথমেই সব বই কিনে ফেলার কোন দরকার নেই। বিষয়ভিত্তিক বই তো অবশ্যই কিনবেন না। একটা সাধারন বিষয় খেয়াল করুন- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে সব সময় অবশ্যই প্রশ্ন আসে। এখন যদি আপনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস মুখস্ত করতে শুরু করেন সেটা কখনোই সম্ভব হবে না। বরং আপনি হতাশ হয়ে যাবেন। এর চেয়ে আপনি বিগত দশ বছরের প্রশ্ন সলভ করুন। দেখবেন একই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আপনার সর্বোচ্চ নম্বর তোলার প্রয়োজন নেই। আপনার প্রয়োজন ৬০-৬৫% মার্কস। 

কাজেই প্রফেসরস বা এশিওরেন্সের যে কোন একটা জব সলুশন কিনে সব প্রশ্ন সলভ করে ফেলুন। আপানার প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারনা হয়ে যাবে। তখন আস্তে আস্তে আরও পড়তে পারেন। ইংরেজির জন্য ইংলিশ ফর কম্পিটিটিভ এক্সাম বইটা নিতে পারেন। গনিতের জন্য একটা বই নিতে পারেন। 

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করার টিপস

আপনি যত ভালো প্রস্তুতিই নিন না কেন, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার যে ২ ঘন্টা সময় থাকে তখন যদি মাথা ঠান্ডা না রাখতে পারেন তাহলে কোন দিনই পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন না। নিচের বিষয় গুলো মাথায় রাখবেন-

১। নিশ্চিত না হয়ে কখনো উত্তর দিবেন না। এটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিন। অনুমানে কখনোই উত্তর দিবেন না।

২। প্রশ্ন কঠিন হলে ঘাবড়ে যাবেন না। প্রশ্ন কঠিন মানে সবার জন্যই কঠিন। প্রশ্ন যত কঠিন হবে আপনার পাশ করার সম্ভাবনা তত বাড়াবে। সহজ প্রশ্ন মানে ফেইলের সম্ভাবনা বেশি।

৩। কখনোই আশেপাশের কাউকে কোন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করবেন না। আপনিও উত্তর দিবেন না। 

৪। ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১১৫+ মানেই আপনি টিকে যাবেন। সুতরাং পরীক্ষার সময় সেভাবেই উত্তর দিবেন।

৫। আপনি যে বিষয়টিতে ভালো পারেন সেই বিষয়টি আগে উত্তর দিন। 

৬। আপনি যে বিষয়টিতে দক্ষ সেটার নম্বর যেন কোনভাবেই কম না হয়। আমি বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ ছিলাম। এই দুইটা বিষয়ে আমার খুব বেশি হলে ২ নম্বর কম পেতাম। 

৭। আমি ইংরেজিতে কাঁচা ছিলাম। ফলে শুধুমাত্র যে প্রশ্ন গুলো আমি শতভাগ নিশ্চিত সেগুলোই উত্তর করেছি।